গত কয়েক বছর ধরে স্থুলতার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় দেখা যায় যে গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে স্থূল মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আর প্রকৃতপক্ষে এর জন্য দায়ী মানুষের পরিবর্তনশীল জীবনধারা ও জাঙ্ক ফুড এর সহজলভ্যতা। স্থুলতা জীবনকে উপভোগ করতে খুব একটা বেশি সমস্যা সৃষ্টি না করলেও এটি যখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরে তখন এটি ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সমস্যাসহ গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে আসে, এবং এর চরম পর্যায়ে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আপনি জানেন কি যে প্রতিবছর ৩.৪ মিলিয়ন এর বেশি মানুষ স্থুলতায় ভোগে? মজার ব্যাপার হল এমন কিছু দেশ আছে যার মাত্রাতিরিক্ত ওজনের মানুষের হার স্বাভাবিক ওজনের মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। ইনফোগ্রাফিক্স শো এর এই পর্বে বিশ্বের ফ্যাটেস্ট দেশ কোনগুলো তা জানতে পেরে আপনি বিস্মিত হবেন।
স্থুলতার তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুঁজে পাওয়া এমন কোনো অদ্ভুত ঘটনা নয় কারণ এর মোট জনসংখ্যার ৩১.৮% বর্তমানে স্থুল বা মোটা। কোকা-কোলা,ডকিন 'ডোনাটস ও ম্যাকডোনাল্ডের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত হওয়ার সত্ত্বেও মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অখ্যাতি পেয়েছে। বেশিরভাগ দেশই আমেরিকান সংস্কৃতিকে লক্ষ্য করে, তাই আমেরিকার এটিই সুযোগ এই সমস্যাকে মোকাবেলা করে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবার।
আপনাকে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না এমন একটি দেশ খুজে বের করতে যেটি স্থূলতা সমস্যায় ভুগছে। গবেষণায় দেখা যায় যে মেক্সিকোতে সম্প্রতি প্রক্রিয়াজাতকৄত এবং চিনিযুক্ত খাবারের ব্যাপক প্রচলনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্থূলতার হারের বিশাল বৃদ্ধি ঘটেছে। এর প্রতিবেশী দেশ, আমেরিকার মতই মেক্সিকান জনসংখ্যার ৩২.৪% লোক স্থূলতা সমস্যায় ভুগছে। তাই এখনই সময় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জাতি হিসাবে কাতার গর্বিত হতে পারে, কিন্তু আপনি এই দেশের খাদ্যাভ্যাসের দিকে লক্ষ্য করলে আঁতকে উঠবেন কারণ এই দেশে ৩৩.১% স্থুল লোকের বাস। কাতারের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে এটি দ্রুত পশ্চিমা-শৈলীর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করেছে যা কাতারের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
আফ্রিকায় তীব্র খাদ্য সংকট থাকার সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা স্থুলতার তালিকায় স্থান দখল করেছে। দেশটি দারিদ্রতা ও খাদ্য ঘাটতি সহ চরম দুর্নীতি, মানুষের মধ্যে তীব্র অসমতা, অপর্যাপ্ত খাদ্য বিতরণ ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে জরাজীর্ণ হবার সত্ত্বেও এই দেশে ৩৩.৫% মেদবহুল লোকের বাস। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্চর্যজনকভাবে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে স্থুল লোকের সংখ্যা এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণা মতে, স্থুলতার তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এর নাম আসার কারণ হিসেবে দেশটির তেল শিল্প থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতিকে দায়ী করা হয়। এই দেশে ৩৩.৭ % মাত্রাতিরিক্ত ওজনের লোক বাস করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এর অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পশ্চিমা খাদ্যাভ্যাস এবং জাঙ্ক ফুড এর ব্যাপকতা। ফলস্বরূপ দেশটির স্থুলতার হার বিশ্ব গড় সংখ্যার দ্বিগুণ বেড়েছে এবং এখানে মোট জনসংখ্যার ১৯% লোক ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে কয়েক দশক আগেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডায়াবেটিস ছিল না, তবে দেশের খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে এই রোগের পরিমাণ গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে।
আরেকটি আফ্রিকান দেশ এই স্থুলতার তালিকায় স্থান লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অন্য অনেক অপ্রত্যাশিত দেশগুলির মতো মিসর ও এই তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছে কারণ এই দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়নের ফলে এর মোট জনসংখ্যার ৩৪.৬% স্থূলতার সাথে লড়াই করছে। গবেষণায় দেখা যায় যে স্থুলতার সাথে সামাজিক অবস্থানের খুব ক্ষীণ সম্পর্ক বিদ্যমান যা সমগ্র দেশকে নির্বিচারে প্রভাবিত করে। এর কারণ হল নিম্ন ও উচ্চ উভয় আয়ের পরিবারই নিয়মিতভাবে ফাস্ট ফুড গ্রহণ করে। আশ্চর্যজনকভাবে, বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে মিশরের স্থান প্রথম এবং দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ৩২% শিশু স্থুলতার ভীতিজনক অবস্থানে রয়েছে।
এই সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশটি গত কয়েক বছরে তার স্থূলতা সূচকের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেছে। বেলিজ এমন একটি দেশ যেটি আগে কখনো ওজন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর জন্য বিবেচিত হয়নি, অথচ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে বেলিজিয়ান জনসংখ্যার ৩৪.৯% লোক স্থুলতায় ভোগে। এই আশ্চর্য উদ্ঘাটনে বিস্মিত হয়ে বেলিজের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা তাদের জনসাধারণকে সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন ও উৎসাহিত করার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যতালিকা প্রকাশ করেছে।
আরব উপদ্বীপের বৃহত্তম দেশ সৌদি আরবের ৩৫.২% লোক স্থূলতার সাথে যুদ্ধ করে। এই তালিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় এই দেশে ওজন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার ডলার খরচ হচ্ছে যদিও স্থুলতা সম্পর্কিত বিষয়গুলো সৌদি স্বাস্থ্য বীমার অন্তর্ভুক্ত নয়। সবচেয়ে পরিচিত একটি রোগ, অবশ্যই, ডায়াবেটিস, যা সৌদি মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১০ বছরে!
গত কয়েক বছরে, আরব উপদ্বীপের এই ছোট দেশটি পৃথিবীতে সবচেয়ে মেদবহুল জাতি হিসেবে পরিণত হয়েছে। কুয়েতে শতকরা ৪২.৮% লোক স্থূল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ১৩% বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে তিন গুণ বেশি ওজনের মানুষ আছে কুয়েতে। রিপোর্টগুলি নিশ্চিতভাবে ব্যাখ্যা করেছে যে ফাস্ট ফুডের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ও ভালবাসা কুয়েতকে এই তালিকায় রেখেছে এবং এর ফলে পাকস্থলী স্ট্যাপলিং অস্ত্রোপচার এর সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
যদিও কেউ কেউ দাবি করেন যে এই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের ৪৫.১০% লোকের স্থূলতার কারণ হল এই দ্বীপপুঞ্জটিতে জেনেটিকভাবে সহজে ওজন বৃদ্ধি পায় তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ধরনের যুক্তি মূলত ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমারা ও এর প্রতিবেশী দ্বীপগুলো নাউরু এর স্থূলতার হারের জন্য দায়ী। কারন? এর কারণ হিসেবে রিপোর্টগুলি ব্যাখ্যা করে যে, যখন ঔপনিবেশিকরা প্রথম এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এসেছিল, তখন তারা তাদের নিজস্ব পশ্চিমা খাদ্য রান্নার পদ্ধতি নিয়ে এসেছিল। তারা স্থানীয় মানুষজনকে তাজা মাছ ও শাকসব্জি কাঁচা খাওয়ার পরিবর্তে এগুলোকে রান্না করে খাওয়ানো শিখিয়েছিল। আর এভাবেই নাউরুবাসী চর্বিযুক্ত এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সাথে পরিচিত হয়।
আপনি কি এই সংখ্যাগুলো দেখে বিস্মিত হয়েছেন ? তাহলে অবশই আপনি যাতে এই পরিসংখ্যানের অংশ না হোন তা নিশ্চিত করুন! আপনি ফল এবং শাঁকসবজি নিয়মিত খান, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন, এবং নিজের সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটুন। এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি নতুন বছরের সংকল্প গ্রহণের জন্য!
আপনি কি সাহায্য পেয়েছেন
সকল মন্তব্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন নিবন্ধন করুন